স্বাস্থ্য টিপস
মানবজীবনে মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম5 (1)
মানবজীবনে মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
মানবজীবনে মধুর উপকারিতা :
মানুষের জন্য মধু আল্লাহ প্রদত্ত এক মহান নেয়ামত। রোগ নিরাময়ে এবং স্বাস্থ্যের জন্য এর গুন অপরিসীম। আমাদের মহানবী (সা) বলেছেন মধু মানুষের জন্য মহা ঔষধ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে মধুকে মহৌষধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি যেমন কাজের তেমনি সুস্বাদু, উত্তম খাদ্যনির্যাস। তাই ঔষধ ও খাদ্য উভয়গুণী সমৃদ্ধ প্রাচীনকাল থেকেই। যার জন্য সকল দেশের সকল মানুষ পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
মধুর উপকারিতা |
মধুতে যে সব উপকরণ রয়েছে তার মধ্যে সুগার অন্যতম। চিনি বা সুগার আমরা অনেকেই খাইনা। কিন্তু মধুতে যে পরিমাণ গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ এই দুইটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় যার জন্য ফ্যাক্ট হিসাবে জমা হয় না। মস্কোতে মধুর নমুনা পরীক্ষা দেখা গিয়েছে এতে কপার, ক্রোমিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, জৈব এসিড, লেড, টিন, জিংক , কতিপয় ভিটামিন প্রোটিন, হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিকস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স, এবং পানি (১৯-২১%) ছাড়াও আরো নানান প্রকার পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
মধুতে সবচেয়ে বেশি উপাদান হিসেবে পাওয়া গেছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। যেমন- বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ ইত্যাদি। মধু এমন এক ধরনের ঔষধ যার মধ্যে পচন নিবারক ধর্ম আছে। প্রতিদিন সকালে মধু খালি পেটে খেলে এরগুন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আপনারা হয়তো সম্পূর্ণ ভাবে বুঝতে পেরেছেন যে মধু আমাদের জন্য কতটা উপকারী উপাদান।বিশেষজ্ঞ লিয়ানা কাটরোন বলেছেন, সব ধরনের মধুই উপকারী। যে মধুর রং বেশি গাঢ় তাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানটি সবচেয়ে বেশি। সেজন্য অপ্রক্রিয়াজাত বিশুদ্ধ, খাঁটি মধু সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মধুর উপাদান সমূহ:
মধুতে খাদ্য উপাদান রয়েছে প্রায় ৪৫ টির মত। ফুলের পরাগ এ মধুতে গ্লুকোজ থাকে ২৪ থেকে ৩৮ শতাংশ, ফ্রুক্টোজ ৩৮ থেকে ৪৪ শতাংশ, মন্টোজ ৫ থেকে ১২ শতাংশ এবং সুক্রোজ ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ। আরও এনকাইম ১১ শতাংশ, অ্যামাইনো অ্যাসিড ২২ শতাংশ খনিজ লবণ ২৮ শতাংশ মোটামুটি এগুলো নিয়েই মধু গঠিত। এবং এর মধ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের শরীরে রক্তের ঘনত্ব বাড়ায়। মধুতে কোন প্রকার চর্বি বা প্রোটিন নেই যার জন্য মধুর উপকারিতা অপরিসীম। ২৮৮ শক্তি থাকে ১০০ গ্রাম মধুতে। এবার হয়তো বুঝতেই পারছেন যে মধু আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় খাবার বা ঔষধ।
মধুর উপকারিতা:
আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে যেমন, রোগবালাই ভালো করে। তেমনি সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে আমরা ব্যবহার করি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা আমি তুলে ধরছি-
মধুর উপকারিতা
রক্তশূন্যতা দূর করে:
মধু আমাদের দেহে রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠন করতে সর্বোচ্চ সহায়তা করে। যার ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা হয়না এবং যদি রক্ত থাকে তাহলে সে রক্তশূন্যতা দূর হয়ে যায়। কারণ এতে রয়েছে বেশি পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও কপার।
শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে:
মানবদেহের শক্তির ক্ষমতা বাড়াতে মধুর উপকারিতা। তাপ ও শক্তির উৎস হিসেবে মানুষ গ্রহণ করে। দেহের তাপ ও শক্তি সম্পূর্ণভাবে শরীরকে সুস্থ সবল ও সঠিক রাখে। মানবদেহের কর্মক্ষমতার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে শক্তি। আর সেই শক্তিটা আমরা মধু থেকে পেতে পারি যদি বেশি বেশি গ্রহণ করি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
শরীরের ভেতর ও বাহিরে যে কোন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে তার থেকে রক্ষার জন্য আমরা উপকারী হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। মধুতে উপকারী হিসেবে এমন এ ধরনের এন্টিভাইরাস আছে যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এন্টিভাইরাস আমাদের দেহকে সর্বক্ষণ রক্ষা করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য মধুর উপকারিতা:
আমাদের সমস্যার মধ্যে একটি অন্যতম বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য মধু উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ২- চামচ মধুর সাথে ১-চামচ রসুন মিশিয়ে দিনে দুইবার নিয়মিত খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ার একঘন্টা আগে মধু খাওয়া উত্তম।
ওজন কমাতে মধুর উপকারিতা:
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের ওজন অনেক বেশি। সে ওজন বৃদ্ধির একমাত্র কারণ চর্বি। মানবদেহের চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে তাদের ম্যাথ মোটা হতে থাকে এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমরা পড়ে এসেছি যে মধুতে কোন প্রকার চর্বি নেই। যার জন্য ওজন কমাতে এই উপাদানটি গ্রহণ করলে আমাদের পাকস্থলীর মধ্যে গিয়ে পাকস্থলী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে শরীরের চর্বি কমায় যার জন্য আমাদের শরীরের ওজন কমতে থাকে এবং ওজন সঠিক পর্যায়ে নিয়ে আসে।
পানিশূন্যতা দূর করতে মধু উপকারিতা:
মানবদেহে পানিশূন্যতার একটি বিশেষ রোগ ডায়রিয়া। ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানির সাথে 50 মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে পানিশূন্যতা একেবারে দূর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মধুর উপকারিতাটি আপনি চাইলে দেখতে পারেন।
ফুসফুসের সকল প্রকার রোগ দূর করে:
এজমা বা হাঁপানি রোগী যদি নাকের কাছে মধু ধরে টেনে নেন তাহলে সে । স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সক্ষম হবে। জানা গেছে ১ বছর পুরনো মধু শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য উপকারী। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এই উপাদানটি ফুসফুসের সকল প্রকার রোগ দূর করতে অনেক উপকারী।
যৌন দুর্বলতায় বিশেষ উপকারিতা:
আপনারা যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে কি যৌন দুর্বলতা আছে?
তাহলে আপনাদের জন্য মধু সবচেয়ে বড় সমাধান। আপনারা যদি নিয়মিত মধু ও তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যৌন ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ফর্মুলাটি আপনারা ব্যবহার করে দেখতে পারেন কারণ মধুর উপকারিতা অপরিসীম।
ঘুমের জন্য মধুর উপকারিতা:
ঘুমের জন্য একটি বিশেষ কার্যকরী ঔষধ। কোন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য ঔষধ সেবন করেঘুমানোর চেয়ে মধু খাওয়া উত্তম। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে 2 চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রাতে গভীর ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রক্ত পরিষ্কার করে:
হালকা গরম এক গ্লাস পানির সাথে দুই চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভরা পেটে প্রতিদিন খেলে মিশ্রণটি আপনার শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে এবং রক্তনালী পরিষ্কার করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
আপনাদের মধ্যে যাদের কুষ্ঠ কাঠিন্য হয়েছে তারাই হয়তো কোষ্ঠকাঠিন্যের জ্বালা বুজতে পারবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত ভিটামিন বি এর অভাবে হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে যারা সবুজ শাকসবজি খায় না তাদের বেশিরভাগই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ ভোগে। আমরা জানি, মধুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতেই তো পারছেন যে মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে পারে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ খাঁটি মধু পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য একেবারে দূর হয়ে যায়।
হজমশক্তি বাড়ায়:
পেটের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী হিসেবে কাজ করে মধু। যে পরিমাণ শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়ে যায়। তা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং তাড়াতাড়ি ক্রিয়া সম্পাদন করে।
মধুর অপকারিতা:
মধুর যেমন অপকারিতা নেই। শুধু মধু সীমিত পরিমাণে খেতে হবে, কারণ বেশি পরিমাণে মধু খেলে পেটে জ্বালাপোড়া এবং বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাই সাবধান থাকবেন যেন উপকার পেতে গিয়ে অপকার না হয়।
মধু খাওয়ার নিয়ম:
মধু খাওয়ার নিয়ম |
মধু খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। এই বলে শুধু খেলেই হবে না মধুর খাওয়ার নিয়ম টা জানা আমাদের জন্য জরুরী। কারণ নিয়ম মেনে মধু খেলে আমরা এটির উপকারিতা বুঝতে পারব। চলুন জানা যাক মধুর উপকারিতার জন্য খাওয়ার নিয়ম-
১. অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে মধুর তাপমাত্রা ৪২° সেন্টিগ্রেডের উপরে হলে মধু উপকারের বদলে বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই আপনি বেশি গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খাবেন না ।চায়ের সাথে মিশিয়ে খাবেন না। মধু হিসাবে চিনির ব্যবহার অপরিসীম ।তাই আপনারা মধু হিসেবে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। তাই আপনারা মধু খাওয়ার সময় লক্ষ্য রাখবেন যেন মধুতে বেশি গরম না হয়।
২. আপনাদের মধ্যে যাদের ওজন বেশি তারা হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে মিশ্রণটি পান করার ফলে এই মিশ্রণটি আপনার শরীর থেকে চর্বি বের করে। এই মিশ্রণটি আপনার দীর্ঘমেয়াদী ওজন ঠিক রাখতে বিশেষ উপকারী।
৩. গরম চা বা গরম পানি ঠান্ডা হওয়ার আগ পর্যন্ত মধুর সাথে মিশিয়ে না হওয়ার চেষ্টা করবেন। তাপমাত্রা যখন 42 ডিগ্রির নিচে চলে আসবে তখন আপনারা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন যেন পানি কোনভাবেই বেশি গরম না হয় মধু মিশিয়ে খাওয়ার জন্য।
৪. অদর উপাদানসমূহ গরম কোন বস্তুর সংস্পর্শে এলে এটি বিষাক্ত রূপ ধারণ করে। তাই আপনারা কোন সময় চিন্তাও করবেন না যে মধু রান্না করে বা গরম করে খাওয়ার। সব সময় মনে রাখবেন ঠান্ডা মধু খাওয়ায় সবচেয়ে উপকারী। আমরা সাধারণত বাজার থেকেই যে মধুর বোতল বা পট কিনি সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করার সময় তাপের সংস্পর্শে যায়। যার ফলে মধু আগেই তার গুণাগুণ হারাতে শুরু করে। তারপরেও যদি আপনারা মধুকে গরম কেঁচোর সংস্পর্শে আনেন তাহলে মধুর গুনাগুন একেবারেই কমে যাবে। মধুকে সবসময় ঠান্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন যাতে মধুর গুনাগুন না হারায়।
মধু কখনো নষ্ট হয় কিনা ?
মধু কখনো নষ্ট হয় কিনা |
নষ্ট হয়, তবে সব সময়ের মতো নষ্ট হয় না। যদি অনেকদিনের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনারা মধুর কাচের বোতল কয়েকদিন এক জায়গাতে রেখে দিলে দেখতে পারবেন মধুর বোতলের নিচের দিকে দানাদার জমে গেছে। এটা দেখে হয়তো অনেকে বলতে পারেন যে মধু নষ্ট হয়ে গেছে মধুতে ভেজাল আছে। এটা মোটেও ঠিক না কারণ, আপনি যদি ফ্রিজে রাখেন তাহলে দেখতে পারবেন নিচের দিকে দানাদার পড়ে আছে। সেই মধুটা যদি আপনি নিজের হাতে মৌমাছির চাক থেকে তুলে আনেন এরকমই হবে।
আবার আপনারা বর্ষাকালে দেখবেন মধুতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গেছে তখন আপনারা বলতে পারেন যে এই মধুতে ভেজাল মেশানো আছে অথবা এটির উপকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে ভাবার চিন্তা নেই কারণ মধু এমনই হয়।
সাধারণত পিওর মধু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এরকম অনেক মধুতে টক গ্যাসের উৎপন্ন হয় আবার অনেক মধুতে আলাদা গন্ধ থাকে।
প্রতিদিন কতটুকু মধু খাওয়া উচিত:
খুবই সুস্বাদু এবং বৃষ্টি খাবার। যার জন্য বেশ কিছুটা মধু খাওয়ার ইচ্ছে সবারই হতে পারে। আমরা জানি এর উপকারিতা অনেক। আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ, ওজন, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ, শরীরের শক্তি বাড়ানো এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য বিশেষ উপকারিতা পালন করে। আমরা এটাও জানি বেশি কোন কিছুই ভালো না। তাই মধু সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণের খেলে চোখের সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব, ডায়রিয়া, ক্লান্তিভাব, হার্টের সমস্যা এবং এলার্জির দেখা দিতে পারে। দিনে ২৫ গ্রামের অতিরিক্ত মধু খাওয়া মোটেও উচিত না, কারণ এতে ৫৩% ফ্রুকটোজ রয়েছে। তাই ২৫ গ্রামের বেশি সেবন করা ক্ষতিকারক। এই নিয়মটা মেনে মধু খেলে উপকারিতা সর্বোচ্চ পাবেন। আরেকটু ভালো হয় মধুর সাথে দারুচিনি, লেবুর রস বা রসুন দিয়ে মিশ্রন করে খাওয়ার।
খাঁটি মধু চেনার উপায়:
মধু শুধুমাত্র একটি উপকারী খাদ্য নয় এটি বিশেষ ধরনের ঔষধ ও। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এখনও পর্যন্ত এই দ্রব্যটি ব্যবহার করে আসছে চিকিৎসা দ্রব্য হিসেবে, খাদ্য হিসাবে এবং মিষ্টি হিসাবে।
খাঁটি মধু চেনার উপায়
বর্তমান সময়ে বাজারে যে মধু পাওয়া যায় বেশিরভাগ পদ্ধতি ভেজাল মেশানো থাকে। যার জন্য আমরা সঠিক মধু চিনতে পারিনা। এখানে আমি সঠিক মধু চেনার উপায় বা টিপস শেয়ার করব-
১. খাটি মধুর গন্ধ সবসময় মিষ্টি ও আকর্ষণীয় হবে।
২. আসল মধুগুলো সবসময় মিষ্টি হবে, কখনো ঝাঁঝালো বা টক ভাব থাকবে না।
৩. যদি মধুর পাত্র থেকে কিছু মধু আঙ্গুলের মাথায় তুলেন এবং যদি বিন্দুর মতো স্থির হয়ে থাকে তাহলে এটা আসল।
৪. এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিবেন। লক্ষ্য করবেন যদি সে কাগজ মধুটুকুকে চুষে নেয় তাহলে বুঝবেন ওই মধু খাঁটি নয়। কাগজ যদি মধুকে না চুষে তাহলে ওই মধুর উপকারিতা পাবেন।
৫. শীতের দিনে খাঁটি মধুতে দানা বেধে যায়। অথবা একটি মোমবাতির সুতাটি মধুর বোতল এর ভিতরে ভালোভাবে ঢুকিয়ে নিন। তারপর সেই সুতার মধ্যে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। যদি আগুন ধরে তাহলে বুঝবেন এই মধু খাঁটি এবং যদি আগুন না ধরে তাহলে ও মধু খাঁটি নয়
৬. সাদা কাপড়ের মধ্যে একটু মধু মাখিয়ে ৩০ মিনিটের মত রেখে দেন। তারপর কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। যদি দেখেন কোন প্রকার দাগ লেগে যায় তাহলে বুঝবেন মধুতে ভেজাল আছে। আর যদি কোন প্রকার ঢাকনা থাকে তাহলে বুঝবেন মধু খাঁটি।
৭. একটি ক্লাসে এক চামচ মধুর সাথে পানি মিশিয়ে নিন। তারপর ৩ থেকে ৪ ফোঁটা ভিনেগার মিশ্রন করুন। যদি দেখেন মিশ্রণটি ফুলে উঠেছে তাহলে মধুতে ভেজাল আছে। আর যদি না খুলে তাহলে ওই মধুতে উপকারিতা পাবেন।
৮. একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ পানি নিন। এর সাথে 21 চামচ মধু মিশিয়ে নিন যদি দেখেন মধু পানির সাথে মিশে গেছে, তাহলে ওই মধু নকল।
যষ্টিমধু কি :
যষ্টিমধু কি |
যষ্টিমধু মধু থাকলেও আসলে এইসব কিন্তু নয়। তবে এর মান মধুর চেয়ে কমও নয়। আমরা যষ্টিমধু হিসেবে ব্যবহার করি আসলে গাছের শিকড়। এর প্রধান ব্যবহার হয় ঔষধ হিসাবে। যষ্টিমধু হারবাল তৈরীর ক্ষেত্রে অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। সুগন্ধি হিসেবে খাবারে ব্যবহার করা হয় এই যষ্টিমধু। আইসক্রিম, মিষ্টি ও বেকিং সামগ্রী তৈরি করা হয় শিখরের পাউডার থেকে।
যষ্টি মধুর উপকারিতা:
১. লিভারের সুরক্ষা করে।
২. ফুসফুসে জমে থাকা কফ পরিষ্কার করে।
৩. যষ্টিমধু ও ঘি মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।
৪. ব্রণ, কালো দাগ ও ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫. গলাব্যথা ও কাশি কমাতে যষ্টিমধুর উপকারিতা অপরিসীম।
৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
৭. পেটের অ্যাসিডিটি বা গ্যাস কমানোর জন্য ফুটানো পানিতে যষ্টিমধুর সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন।
৮. তিলের তেল ও আমলকীর সাথে যষ্টিমধু মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং চুলের খুশকির জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৯. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যষ্টিমধুর ও দুধ একসাথে মিশিয়ে খান।
যষ্টি মধু খাওয়ার নিয়ম:
ফুটন্ত গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে মধুর সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। তাছাড়া দুধের সঙ্গে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। পরিমাণমতো শুধু যষ্টিমধুর গুড়ো খেতে পারেন।
শিশুদের মধু খাওয়ানো কি উচিত?
সাধারণত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুদের ঠান্ডা, সর্দি-কাশি সবসময় রেগেই থাকে। ঋতু পরিবর্তনের জন্য এদিক-ওদিক হলেই শিশুদের নানান রোগের দেখা দেয়। যার জন্য শিশুদের নিয়ে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে যেতে হয়। কেউ কেউ আবার ঘরোয়া পদ্ধতিতে এইসব রোগের সমাধান খুঁজে বের করেন। গরুর মধ্যে মধু খাওয়ানো অন্যতম উপকারিতা শিশুদের জন্য পাওয়া যায়।
শিশুদের মধু খাওয়ানো কি উচিত |
ঐতিহাসিক ভাবে সর্দি- কাশি দূর করার জন্য মধু দৈর্ঘ্যদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছয় মাসের শিশুদের মধু খাওয়ানো ঠিক নয়। কারণ তাদের এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছয় মাসের শিশুদের অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি একটু একটু মধু খাওয়ানো যেতে পারে। মধুতে উপস্থিত থাকা ক্লাস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম উপাদান কখনও কখনও শিশুদের খাদ্যে বিষক্রিয়া তৈরি করে। মধুর এধরনের উপাদানের সঙ্গে লড়াই করার মতো ক্ষমতা ছোট শিশুদের শরীরে তৈরি হয় না। একটু বড় কিংবা বয়স্কদের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া ক্ষতি করতে পারে না কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট থাকে। অনেকে বলেন শিশুদের দুই বছরের নিচে মধু খাওয়ানো ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে ওই শিশুদের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। যার জন্য ছয় মাসের উপরের শিশুদের একটু একটু মধু খাওয়ানো যেতে পারে।
রসুন ও মধুর উপকারিতা:
সর্দি কাশি ওজন কমানোর জন্য মধু ও রসুনের মিশ্রণ বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। । এই মিশ্রণটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর। রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন , একটি অর্গানসালফার যৌগ রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। গবেষণায় বলা হয়, রসুন থেকে অর্গানসালফার যৌগিক সম্ভবত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল থাকে।
মধুতেও এমন এক ধরনের যৌগ থাকে, যা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। যার জন্য রসুন ও মধু দুটি উপাদান মিশ্রিত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বৃদ্ধি করে। এ জন্য এই মধু ও রসুন মিশ্রন শক্তিশালী ঘরুয়া হিসেবে মিশ্রন বিবেচিত।
ত্বকে মধুর উপকারিতা:
আমরা দোকান থেকে কিনে মুখ পরিষ্কার করার জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। কিন্তু দোকানে পাওয়া সকল ধরনের ফেসওয়াশ থেকে মধু আমাদের ত্বকের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। অনেক বিউটি এক্সপার্ট বলেছেন, ত্বকের জন্য মধুর থেকে উপকারী জিনিস আর কিছুই নেই। মধুতে উপাদান হিসেবে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, যা ত্বককে উজ্জ্বলই করে না, তারই সঙ্গে ত্বকের সকল প্রকার সমস্যাও দূর করে।
ব্রণের জন্য মধুর উপকারিতা:
ব্রণের জন্য মধুর উপকারিতা |
মধু ব্রণ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বদর প্রদাহরোধী উপাদান ত্বকের তৈলাক্ত দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন মধু ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে। তাছাড়া ত্বকের কালো দাগ ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে। এমনকি ত্বকের খারাপ অবস্থা- একজিমা রোদেও মধু সহায়তা করে। অধরে অসাধারণ ক্ষমতা আরামদায়কভাবে ত্বকের সকল প্রকার ক্ষতি দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বক পরিষ্কার করতে মধু :
ব্রণ দূর করতে অ্যান্টিসেপ্টিক,ব্যাক্টেরিয়ারোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মধুর উপাদান সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ব্ল্যাকহেডস থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে আধা চামচ মধু মুখের মধ্যে লাগিয়ে নিন। ৩০ সেকেন্ড পর মুখ ধুয়ে ফেলুন তাহলে ত্বকের জন্য মধুর সর্বোচ্চ উপকারিতা অনুভব করতে পারবেন।
উপসংহার:
চিনির বদলে মধু খাওয়া অনেক ভালো অভ্যাস।তবে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন কোনভাবেই যেন অতিরিক্ত না খাওয়া হয়।চিনিকে আস্তে আস্তে বর্জন করে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রাকৃতিক শর্করা হিসাবে মধুকে বেছে নিতে পারেন। যেসব ফল মিষ্টি ওই সব ফল খেতে পারেন। দারুচিনি, স্টিভিয়া, খেজুর বা পাম চিনির মতো মসলা হিসেবে ও মধু ব্যবহার করতে পারেন চিনির বদলে। পরিমাণমতো মধু খেলে ঠান্ডা জনিত সকল প্রকার রোগ ভাল হয় এবং পেটের সকল রোগের ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া যায় পেটের সকল রোগের ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া যায়।
Pingback: ঘি খাওয়ার নিয়ম শরীরের জন্য ঘি এর উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম -
Pingback: হ্যালোইন উৎসব কি? | Amir info Bangla