মায়া
মায়া গল্প ২য় পর্ব5 (2)
মায়া গল্প ২য় পর্ব
#মায়া
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
পৃথু আজ সারাদিন আমার থেকে আড়ালে আড়ালে থেকেছে। এমনকি দুপুর বেলা খায়ওনি পর্যন্ত। আম্মা ডেকেছেন ক’বার।সে বলেছে পেটে গ্যাস করেছে তাই খাবে না।
কিন্তু সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ করে সে আমার কাছে এসে আমার পায়ে পড়ে গিয়ে কেঁদে উঠলো।পৃথুর প্রতি আমার অসম্ভব দূর্বলতা আছে। এই দূর্বলতার নামই হলো মায়া। মায়ার আরেক নাম ভালোবাসা। আমি পৃথুকে খুব ভালোবাসি। বিয়ের আগে এবং পরে আমার নিজের জন্য ওর কাপড়ের চেয়ে দামী কোন কাপড় আমি কিনে পরিনি।ওর খাওয়ার আগে দু’ মুঠো ভাত আমি মুখে দেইনি।পৃথুর অসুখ করলে মনে হয় ওর অসুখটা আমার হয়ে যাক, আমার বোন ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক। সেই বোন যখন নিজের পায়ে পড়ে কাঁদে তখন অবশ্যই খারাপ লাগার কথা। কিন্তু আমার এখন খারাপ লাগছে না। ঘৃণা হচ্ছে ওর প্রতি । কীভাবে সে আমার এতো বড় সর্বনাশটা করে ফেললো!
আমার সাড়া না পেয়ে পৃথু এবার আমার দুটো হাত তার গলার কাছে নিয়ে বললো,’বুবু,আমায় গলা টিপে মেরে ফেল তুই! আমি বাঁচতে চাই না আর।’
আমার ইচ্ছে করছে এখন ওর দু’ গাল খসে একটা চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম আমি। তারপর ধীর স্থির ভাবে বললাম,’আমি কোন চাওয়াটা তোর পূরণ করিনি রে পৃথু?বল আমি তোর কোন চাওয়াটা পূরণ করিনি? তবে কেন আমার এমন সর্বনাশ করলি তুই? কেন?’
কথাগুলো বলতে গিয়ে আমার মুখ ভেঙে কান্না এসে যাচ্ছিলো।চোখ ভিজে উঠছিলো জলে। আমি খুব সঙ্গোপনে জল কান্না লুকিয়ে বললাম,’বল।বলিস না কেন?’
পৃথু কাঁদছে।কথা বলতে পারছে না।
আমি ওর দু’বাহু ধরে প্রচন্ড জোরে নাড়া দিয়ে বললাম,’বলছিস না কেন?’
পৃথু বললো,’আমায় মেরে ফেল বুবু। আমি মরে যেতে চাই।’
‘মরবি কেন?মেরে ফেলেছিস তো আমায়। আমার সুন্দর দুনিয়াটাকে তুই জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছিস। নিজের রক্তের বোন যে বোনকে আমি মনে মনে সন্তান মনে করতাম সেই বোন হয়ে তুই আমার সব কিছু শেষ করে দিলি?’
পৃথু কান্নামাখা গলায় কাঁপতে কাঁপতে বললো,’আমি বুঝতে পারিনি বুবু। আমি না বলতে পারিনি ।’
‘না বলতে পারিসনি মানে?’
‘আমার লজ্জা করছে বলতে।’
কথাটা শুনে আমার মেজাজ একেবারে খিটখিটে হয়ে উঠলো।আর রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। নিজেকে সামলাতে না পেরে হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে পৃথুর গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম,’বোন জামাইয়ের সাথে যখন উলঙ্গ শুয়েছিলি তখন লজ্জা করেনি তোর?’
পৃথু আমার চড় খেয়ে ছিটকে পড়লো খানিকটা দূরে। তারপর শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
আমি দৌড়ে গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে বললাম,’আস্তে।চুপ হয়ে যা বলছি। খবরদার জোরে কাঁদবি না।’
আমার শরীর এমনিতেই দূর্বল।একটু টেনশন করলেই সারা শরীর ঘামতে থাকে।মাথা ভার হয়ে আসে। তাছাড়া পেটের বাচ্চাটা বড় হয়ে আসছে এখন। ওকে নিয়ে একটু হাঁটলেও কষ্ট হয়।মনে হয় এই বুঝি আমার পেট ছিঁড়ে যাবে!
ভাগ্যিস পৃথুর কান্নার গলা আম্মা শুনতে পাননি।শুনে ফেললে বিপদ হতো।তার কাছে আরেকটা মিথ্যে বানিয়ে বলতে হতো।অথবা তিনি যদি জেনে ফেলতেন ভাই বোনের মতো এক ছাদের নিচে বেড়ে উঠা এই দুজন আসলে ভাই বোন নয়। এদের মধ্যে গড়ে উঠেছে নোংরা শারীরিক সম্পর্ক। তখন কী তিনি সহ্য করতে পারতেন এসব!
‘
পৃথু বললো,’বুবু,আজ রাতেই আমি এখান থেকে চলে যাই।!কেউ জানবে না আমি কোথায় গেছি।ভাইয়াও জানবে না আমি কোথায় আছি।
তখন দেখবি ভাইয়া তোর সাথে আগের মতই ভালো থাকবে।’
নাঈম কিন্তু কোনদিন আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। কিন্তু পৃথুর মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমার গা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো। তাহলে কী ওদের এই সম্পর্কটা অনেক পুরনো?
‘
আমি বললাম,’পৃথু,ওর সাথে এসব কবে থেকে করছিস?’
পৃথু তার চোখ মুছে বললো,’আমি পারবো না কিছুই বলতে বুবু।ওর সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না।’
এবার যা রাগ পেলো আমার!
আমি ওর গলা দু’হাতে চেপে ধরে বললাম,’বল বলছি।’
পৃথু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,’ভাইয়া আমার জন্য তোমার কোন ক্ষতি করুক তা আমি চাই না।’
‘তুই কী ভেঙে কিছু বলতে পারিস না রে?’
পৃথু আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
‘আমি কিছু জানি না বুবু। আমি পালিয়ে যাবো এখান থেকে।আজ রাতেই পালিয়ে যাবো।’
পৃথুর কথাগুলো শুনে আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে নাঈমের প্রতি। আমার এখন মনে হচ্ছে পৃথুর যে ভালোবাসাটা ওর প্রতি তা বোধহয় নাঈম জোর পূর্বক আদায় করেছে!আর নাঈম ওর ব্রেনে এমন ভয়ঙ্কর কিছু কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে যার কারণে পৃথু তার মুখ খুলছে না। কিন্তু আমার তো যে করেই হোক তার মুখ খোলতে হবে।ওর মুখ না খুললে যে আমরা দু বোনই ঘোর বিপদে পড়বো। সেই বিপদ থেকে কিছুতেই আর রক্ষা মিলবে না আমাদের।
‘
আমি এবার পৃথুর দুটো হাত আমার হাতের মুঠোয় এনে অনুনয়ের গলায় বললাম,’পৃথু, তুই যদি কিছু লুকিয়ে রাখিস তবে তা আমাদের দুজনের জন্যই খারাপ হবে। প্লিজ সবকিছু খুলে বল। কিচ্ছু হবে না বললে। বরং ভালো হবে আমাদেরই।বল তোর ভাইয়া তোর সাথে কী জোর করে এসব করে?’
পৃথু কাঁদতে কাঁদতে বললো,’ভাইয়া বলেছে কারোর কাছে বলে দিলে সে নাকি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে!’
পৃথুর মুখ থেকে কথাটা শুনে আমার চোখ কেমন অন্ধকার হয়ে এলো। তবে কী পৃথু কে ব্ল্যাকমেইল করে এসব করছে নাঈম?
পৃথু বললো,’বুবু,তুই ভাইয়াকে কিছু বলিস না। আমাদের তো আর কেউ নাই এই দুনিয়ায়।তোর পেটে সন্তান আছে। ভাইয়া যদি রাগে উল্টাপাল্টা কিছু করে তখন কী হবে?’
কথাগুলো শুনে আমার মাথা কেমন ভণভণ করে ঘুরছে।শরীর অসাড় হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে একটু পরই আমি মরে যাবো।
‘
তবুও আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখলাম।আর পৃথুকে বললাম,’প্রথম কখন তোর সাথে ও এমন করে?’
পৃথু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো—
‘
#চলবে